1. nasiruddinsami@gmail.com : admin :
December 13, 2024, 7:47 am

সিংগাইরে শ্রমিক কেনাবেচার হাটে দরকষাকষি করে শ্রম বিক্রি

  • আপডেট সময় : Thursday, November 14, 2024
  • 23 বার দেখা হয়েছে

নিজস্ব প্রতিনিধঃ

মানিকগঞ্জের সিংগাইর  উপজেলার বুক চিরে বয়ে গেছে হেমায়েতপুর সিংগাইর আঞ্চলিক মহাসড়ক। মহাসড়কের দুই পাশের মাঠে শুরু হয়েছে শত শত বিঘা জমিতে বিনাচাষে রসুন রোপণ ও ধান কাটা। আর এসব কাজের জন্য ভোরের আলো ফোটার আগেই জীবিকার জন্য কাজ খুঁজতে আসা মানুষের আনাগোনায় মুখর হতে শুরু করে নয়াবাজার ‘শ্রমিক হাট’। প্রতিদিন শিশিরভেজা ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নে অবস্থিত নয়াবাজারে এই হাট বসে। এখানে পণ্যের মতো নিজেদের সারাদিনের শ্রম কেনাবেচা হয় দর কষাকষি করে।বুধবার ভোর ৫টায় নয়াবাজার শ্রমিক হাটে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছোট ট্রাক, লেগুনা, সিএনজি, অটোযোগে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাজার হাজার শ্রমিক নয়াবাজার শ্রমিক হাটে শ্রম বিক্রি করতে এসেছেন। পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি দেখা যায় নারী শ্রমিকদেরও। এই হাটে শ্রমিকরা যেমন শ্রম বিক্রি করতে আসেন, ঠিক তেমনভাবে শ্রম কিনতেও আসেন স্থানীয় গৃহস্থরা। মহাসড়কের পাশে হাতে কাস্তে ও ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে শ্রম বিক্রির অপেক্ষায় আছেন শ্রমিকরা। সারাদিনের শ্রমের দরকষাকষি হলেই চলে যাচ্ছেন গৃহস্থদের সঙ্গে। প্রতিটি শ্রমিক সারাদিনের জন্য কেনাবেচা হচ্ছেন ৫০০-৬০০ টাকায়। তবে একই সমান কাজ করলেও নারীদের দেওয়া হচ্ছে ৩৫০-৪০০ টাকা বলে অভিযোগ আধিবাসী নারী শ্রমিকদের। শ্রমিকদের চাহিদা বেশি থাকায় কোনো শ্রমিককে বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে না এ বছর। সারা দিন কাজ শেষে সন্ধ্যায় মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান থেকে যানবাহনযোগে বাড়ি ফিরে যায় শ্রমিকরা।

তবে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, সলঙ্গা, মান্নাননগর, উলস্নাপাড়াসহ বিভিন্ন স্থান থেকে শ্রমিক হাটে আসা শ্রমিকরা জানান, ‘ভোর ৫টার আগেই বাড়ি থেকে তারা বের হন। সড়ক-মহাসড়কে কোনো বাস তারা পান না। এ কারণে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই ট্রাক, সিএনজি, লেগুনাযোগে শ্রমিক হাটে তাদের আসতে হয়। শ্রমিক হওয়ার কারণে কোনো বাস তাদেরকে নিতেও চায় না। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই বেশির ভাগ সময় ট্রাকযোগে শ্রমিক হাটে আসতে হয় তাদের।’

তাড়াশের শ্রমিক আব্দুল জব্বার বলেন, ‘তিনি বাড়ি থেকে ভোর ৫টায় বের হয়েছিলেন। মহাসড়কে এসে কোনো যানবাহন পাচ্ছিলেন না। বাসযোগে শ্রমিক হাটে আসলে ২০ টাকায় হয়ে যায়। কিন্তু বাস না পাওয়ার কারণে তাকে সিএনজিতে ৫০ টাকা খরচ করে আসতে হয়েছে। শ্রম বিক্রি করেছেন ৫৫০ টাকায়। যাতায়াত ভাড়া ১০০ টাকা বাদ দিলে থাকে ৪৫০ টাকা। অনেক সময় গাড়ি না পাওয়া গেলে সেই দিন শ্রম বিক্রি করতে না পেরে বাড়ি ফিরে যেতে হয় তাকে।

উলস্নাপাড়া থেকে আসা শ্রমিক কামরুল ইসলাম বলেন, তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়েই জীবিকা নির্বাহের জন্য ট্রাকযোগে শ্রমিক হাটে এসেছেন। এখন শ্রমিক হাটে চাহিদা থাকায় প্রতিদিনই শ্রম বিক্রি হচ্ছে।নয়াবাজার এলাকার গৃহস্থ মনিরুজ্জামান বলেন, তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে বিনাচাষে এ বছর রসুন রোপণ করবেন। এ কারণে তার প্রায় ২০ জন শ্রমিক প্রয়োজন। শ্রমিক হাটে এসে ২০ জন শ্রমিককে জনপ্রতি ৫৫০ টাকা করে কিনেছেন। যে কয়দিন প্রয়োজন সেই কয়দিন শ্রমিক হাট থেকেই শ্রমিক কিনবেন বলেও জানান তিনি।

তাড়াশের আদিবাসী নারী শ্রমিক বেনতী হাজং বলেন, পুরুষরা যখন শ্রমিক হাটে আসে তারাও তখন আসেন। পুরুষের সমান কাজ করে কখনো বা বেশি কাজ করলেও মজুরি কম পেতে হচ্ছে তাদের। শ্রমিক হাটে সর্বোচ্চ শ্রম বিক্রি করতে পারেন ৩৫০-৪০০ টাকায়। এর বেশি কেউ দাম বলে না। অনেক সময় তো পুরুষ শ্রমিক বেশি থাকলে নারী শ্রমিক কিনতেও চায় না। মজুরি বৈষম্যের কারণে তারা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন প্রতিটি জায়গায়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা আক্তার বলেন, নয়াবাজর শ্রমিক হাট খুব দ্রম্নতই সরেজমিন যাবেন তিনি। সেখানে শ্রমিকদের কোনো সমস্যা আছে কিনা তাদের সঙ্গে কথা বলে সেই বিষয়গুলো নিরসন করবেন বলেও জানান তিনি।

অনুগ্রহ করে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2014 sangbadsaradesh24
Theme Customized By BreakingNews