মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় শালুক সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতি গ্রাহকদের কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। গ্রাহকগণ টাকা ফেরত পেতে প্রশাসন, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ।
তবে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দাবি যেসব গ্রাহক টাকার জন্য ঘুরছেন, তারা সমিতির কোষাধ্যক্ষ আলাউদ্দিনের কাছে টাকা জমা দিয়েছেন। এর দায় প্রতিষ্ঠান বহন করবে না। অধিকাংশ গ্রাহককে আলাউদ্দিন নিজের ব্যাংক হিসাবের চেক ও স্ট্যাম্প করে দিয়েছেন। গত সোমবার উপজেলার মুরগিহাটা এলাকায় সমিতির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সমিতির সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলা হয়েছে এবং অফিস কক্ষে ঝুলছে তালা।
উপজেলার চরআজিমপুর গ্রামে গিয়ে কথা হয় পারভীন বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে কিছু টাকা তাঁর জমা হয়েছে। শালুক সমিতির কোষাধ্যক্ষ আলাউদ্দিন তাঁর কাছ থেকে চেক ও স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ২ লাখ টাকা নেন। ওই টাকার জন্য মাসে ৩ হাজার ২০০ টাকা সুদ দেওয়ার কথা ছিল। চার মাস সুদের টাকাও দিয়েছে কিন্তু জুলাই মাসের ১১ তারিখ থেকে আলাউদ্দিন গা ঢাকা দিয়েছেন। তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।পারভীনের মতো এই গ্রামের আরও ৩০ জন আলাউদ্দিনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
গত সোমবার সিংগাইর উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে শালুক সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতির ১৭ জন গ্রাহক অভিযোগ নিয়ে আসেন। তাদের মধ্যে রফিকুল ইসলাম নামে একজন মুদি দোকানদার নিজের বাড়ি বন্ধক রেখে ছয় মাস আগে মাসে ১ লাখ টাকায় ১ হাজার ৬০০ টাকা সুদে ১১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা দেন আলাউদ্দিনকে। চার মাস সুদ দেওয়ার পর আলাউদ্দিনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি চরআজিমপুর গ্রামে তাঁর মামাবাড়িতে রয়েছেন বলে জানা গেছে। প্রতারণার শিকার ১৭ জন গ্রাহকের পক্ষ থেকে ১ কোটি ৪৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ দেওয়া হয়েছে সিংগাইর থানায়।শালুক সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতির কোষাধ্যক্ষ আলাউদ্দিনের বক্তব্য নিতে তাঁর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
সমিতির সভাপতি আব্বাস আলী ও সাধারণ সম্পাদক মহিদুর রহমান বলেন, তারা ২০১৯ সালে সমবায় সমিতি থেকে নিবন্ধন নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেন। এই প্রতিষ্ঠানে দুইশর মতো সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে সভাপতির ৫০ থেকে ৬০ জন, সাধারণ সম্পাদকের ৪০ জন এবং কোষাধ্যক্ষের ৬০ থেকে ৭০ জন রয়েছে। যার সদস্য তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন ও ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। কেউ কারও সদস্যের দায়ভার গ্রহণ করেন না।
সিংগাইর উপজেলার চেয়ারম্যান মো. সায়েদুল ইসলাম জানান, সমিতির কোষাধ্যক্ষ আলাউদ্দিন গ্রাহকদের টাকা ফেরত না দিয়ে পালিয়েছেন। সমিতি ও পুলিশের দায়িত্ব হচ্ছে গ্রাহকদের আমানত ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
জেলা সমবায় কর্মকর্তা সুমন আহমেদ জানান, গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে শালুক সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতি বন্ধ হয়ে গেছে কিনা তাঁর জানা নেই। তবে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
Leave a Reply