নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রাণঘাতি (কোভিড-১৯) করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা মানিকগঞ্জের সিংগাইরে বিপাকে পড়েছেন দৈনন্দিন (নিম্ম) আয়ের বিপুল সংখ্যক লোক। দাস সম্প্রদায়, শীল সম্প্রদায়, সিমেন্টের দোকানের শ্রমিক রাজমিস্ত্রী,কাঠমিস্ত্রী হোটেল-রেস্টেুরেন্ট এর শ্রমিক বাস,টেম্পো ট্রাক চায়ের দোকানদার, রিকশা চালক এবং ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এখন সম্পূর্ণ বেকার হয়ে পড়েছে । তাদের কর্মস্থল বন্ধ থাকায় উপার্জন থমকে গেছে।
সরকারি কিংবা বেসরকারি পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী যা পাচ্ছেন, তাতে তাদের দৈনিন্দন চাহিদা মিটছে না বলে জানিয়েছেন অনেকেই।
উপায় না পেয়ে পরিবারের খাবার জোগাতে অনেকেই রাস্তায় বের হয়ে পড়ছেন। তবে মিলাতে পাচ্ছে না কোনও কাজ। তাদের চোখে মুখে এখন চিন্তার ছাপ। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
উপজেলার বিভিন্ন বাজারে দিনভর ঘুরে খেটে খাওয়া দিনমজুর লোকজনের সঙ্গে কথা হলে এমন চিত্র ফুটে উঠে। খেটে খাওয়া লোকজনের মধ্যে অনেকেই জানিয়েছেন, তারা পরিবারের খাবারের জোগান দিতে অনেকটা বাধ্য হয়েই রাস্তায় বের হচ্ছেন। তবে রিকশা চালক পাচ্ছে না যাত্রী। দিনমজুর পাচ্ছে না কোনও কাজ।
সিংগাইর বাসষ্ট্যান্ডে যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় থাকা রিকশাচালক ঝিনাইদহ জেলার আবুল হোসেনের ছেলে মো. হাবিব (৫০) বলেন, তার বাড়ি ঝিনাইদহ জেলায় বর্মানে সিংগাইর উপজলার গোবিন্দল গ্রামে ভাড়া থাকেন তার পরিবারে ৬ জন সদস্য রয়েছেন। দৈনিক সংসারে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ হচ্ছে। এখন তার দৈনিক রোজগার হচ্ছে সারাদিনে ১০০ থেকে ২০০টাকা। এর মধ্যে রিকশার মালিককে জমা দিতে হচ্ছে ২০০টাকা। এই অবস্থায় তার সংসার চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে। তিনি বলেন এই ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে রিক্স নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছি কিন্ত রাস্তায় কোনো যাত্রী নেই কিভাবে সংসার চালাবো তা একমাত্র আল্লাহ ভালো জানেন
অপরদিকে, বিপাকে পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন বাজারের প্রায় দুই শতাধিক শীল সম্প্রদায় সেলুন ব্যবসায়ী। এসব সেলুনে দৈনিক মজুরিতে কাজ করছেন প্রায় ৬ শতাধিক শ্রমিক। তারা দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করতেন। এদিয়ে হেসে-খেলেই চলতো তাদের সংসার।
দীর্ঘদিন ধরে তাদের কর্মস্থল বন্ধ রয়েছে। এতে তাদের আয়ের একমাত্র পথও বন্ধ হয়ে গেছে। সংসারের একমাত্র ব্যক্তির উপার্জন বন্ধ হয়ে পড়ায় অনেক পরিবারেই মানবেতর এখন জীবনযাপন করছেন।
অনেকেই জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত তাদের মধ্যে অনেকেই পায়নি সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনও খাদ্য সহযোগিতা। তবে যারা পাচ্ছেন, তাতে মিটছে না তাদের পরিবারের চাহিদা।
সিংগাইর পৌরসভা বাজারের সেলুন ব্যবসায়ীর সাধারন সম্পাদক সঞ্জয় চন্দ্র দাস বলেন, সিংগাইর পৌরসভা বাজারে ২০টি সেলুন দোকান আছে। এখানে প্রতিটি দোকানেই গড়ে ৩জন শ্রমিক কাজ করে আসছিলেন। তারা প্রত্যেকেই দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০টাকা রোজগার করতেন। এখন তাদের উপার্জন বন্ধ।
তিনি আরও বলেন, উপজেলার বিভিন্ন বাজারে প্রায় দুই শতাধিক সেলুন দোকান আছে। বর্তমানে দোকানগুলো বন্ধ রয়েছে। এরই সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেছে মালিক-কর্মচারীর আয়ের একমাত্র পথ। এখন পর্ন্ত আমরা সরকারী কোনো সহযোগীতা পাইনি। এতদিন যাবৎ সেলুন দোকান বন্ধ থাকায় আমাদের আর্ক অবস্থা খুবই খারাপ। অনেক কষ্টে দিনযাপন করছি।
একই বাজারের আরেক সেলুন ব্যবসায়ী বলেন, অন্য পেশার অভিজ্ঞতা না থাকায় আমরা পড়েছে মহাবিপদে। দিনভর কর্মব্যস্ত সেলুনগুলো বর্তমানে তালা ঝুলছে। প্রতিটি সেলুনেই গড়ে ৪ থেকে ৫জন শ্রমিক কর্মরত। এখন তাদেরও আয়-রোজগার বন্ধ। অর্থ অভাবে সবাই এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
সিংগাইর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৯ হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম সম্পূর্ণ করা হয়েছে। আরে ত্রাণ কার্ক্রম অব্যাহত থাকবে।
Leave a Reply