নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
ঢাকার পাশ্ববর্তী জেলা মানিকগঞ্জ। সাতটি উপজেলা নিয়ে গঠিত এই কৃষি প্রধান এবং তিন ফসলির উর্বর ভূমি জেলার সিংগাইর উপজেলা। এই উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা মোট ৫লক্ষ জনগণের বসবাস। সিংগাইর উপজেলায় ১৯৯০ দশে এই উপজেলার ইটভাটার ব্যবসা শুরু হয়। ২০০৩ সালের পর থেকে অবাধে এই উপজেলায় বৈধ, অবৈধ সমানতালে চলতে থাকে ইটভাটার ব্যবসা। এক সময়ে এই উপজেলায় প্রায় ৯০টির অধিক ইটভাটা তৈরি হয়। এখন অবশ্য এই উপজেলায় মোট ৫৫ টি ইইভাটা চালু রয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে প্রায় ৫৫ এর অধিক ইটভাটা। আর এসব ইটভাটার অধিকাংশের নেই সরকারি অনুমোদন ও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র। স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা না থাকায় সরকারি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে, এসব ইটভাটায় চলছে অবাধ শিশুশ্রম। মারাত্মকভাবে দূষণ হচ্ছে স্থানীয় পরিবেশ। বেহাল হচ্ছে ফসলি জমি। এমনটাই দাবি এলাকাবাসী ও স্থানীয় কৃষকদের।এই অঞ্চলে অবস্থিত ইটভাটাগুলোতে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ ইটভাটার মালিকরা দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে সিলেট, জামালপুর, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা ৭ থেকে ১৪ বছর বয়সী অসংখ্য শিশু, কিশোর, কিশোরীকে ইট তৈরি ও বহনের কাজে নিয়োজিত করেছে এবং মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে জীবন কাটাচ্ছে। এই অমানবিক শিশুশ্রম দেখেও না দেখার ভান করে বসে আছে, এই দুই উপজেলার স্থানীয় প্রশাসনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা। ফলে প্রতিনিয়ত শিশুশ্রম আইন লংঘন হচ্ছে এসব ইটভাটায়।
সরেজমিন দেখা যায়, নবাবগঞ্জের মাঝিরকান্দা চালনাই এলাকায় অবস্থিত মেসার্স দোহার নবাবগঞ্জ ব্রিক ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিএনবি) ও দোহার খালপাড় এলাকায় এশিয়া ব্রিক ইন্ডাস্ট্রিজ (এবিআই) নামের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিশু শ্রমিকরা জানায়, ১শ’ ইট বহন করে গাড়িতে পৌঁছে দিলে সরদার তাদের ৯৫ টাকা থেকে ১শ’ টাকা দেয়। আর এভাবেই প্রতিদিন তারা ২ থেকে ৩শ’ টাকা আয় করে থাকে। দোহারের খালপাড় এলাকার এশিয়া ব্রিক ইন্ডাস্ট্রিজ (এবিআই) এ কর্মরত কালাম ৯ (আসল নাম নয়) জানায়, আমাদের ইটভাটায় কোনো স্কুল, মসজিদ নেই। লেখাপড়া করব কিভাবে। লেখাপড়া করতে টাকা লাগে, পাশে বউবাজার এলাকায় মাদ্রাসা আছে যাই না।
শিশুশ্রম আইন লংঘন করে ইটভাটায় কাজ করানোর বিষয়ে, মেসার্স দোহার নবাবগঞ্জ ব্রিক ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক সোহাগ ভূঁইয়া বলেন, আমাদের এখানে কোনো শিশু কাজ করে না। আমাদের সব কাগজপত্র আপডেট আছে।
ইটভাটা চুল্লি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ার কারণে অধিকাংশ শিশু, কিশোর, কিশোরীরা স্বাস্থ্যগত প্রচুর সমস্যায় ভুগছে। আর এর অন্যতম কারণ হিসেবে ভাটার শ্রমিকরা জানায়, কয়লার চেয়ে কাঠের দাম কম হওয়ায় ভাটার মালিকপক্ষ বিভিন্ন গাছ ও কাঠকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে।
দোহার খালপাড়ের স্থানীয় কৃষক বাবুল শেখ বলেন, ইটভাটাগুলোর বিষাক্ত ধোঁয়ায় এলাকার গাছপালা, ডোবা-নালা, পুকুর ও নদীর মাছ মরে যাচ্ছে এবং বিষাক্ত হয়ে উঠেছে আবাদি জমির মাটি। এলাকার পরিবেশ হুমকির মুখে। জমিতে ধান হচ্ছে না। নারকেল, পেঁপে, সুপারি গাছের ফলন নেই। তিনি কৃষি জমির পাশে ইটভাটা বন্ধসহ ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
বসতবাড়িতে কোনো ফলদ গাছের ফলন নেই বলে জানান, এশিয়া ব্রিক ইন্ডাস্ট্রিজ (এবিআই) সংলগ্ন একটি বাড়ির অভিভাবক শুকরজান (৫৫) তিনি আরও বলেন, ইটভাটার কারণে আমার স্বামী ধান বোনা বাদ দিয়েছে। অন্য এলাকার জমিতে ধান, পাট বোনার চেষ্টা করছে।
এ ব্যাপারে দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা আক্তার রিবা ও নবাবগঞ্জ নির্বাহী কর্মকর্তা এইচএম সালাউদ্দীন মনজু বলেন, শিশুশ্রম আইন লংঘন হলে দ্রত ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং অভিযান পরিচালনা করা হবে।
Leave a Reply