নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ ত্যাগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় কঠিন বিপদে পড়েছেন মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। বর্তমানে জেলাসহ উপজেলার দাপটে এমপি ও দলের নেতারা কে কোথায় আছেন জানেন না পরিবারের লোকজন ও সাধারণ মানুষ। প্রাণভয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন মানিকগঞ্জ ২ আসনের সাবেক এমপিসহ দলের জনপ্রতিনিধি ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। এতে অভিভাবকশূন্য সংকটময় এ দিনগুলোতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।রোববার সকালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এমপি ও নেতারা নিজের মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকও বন্ধ রেখেছেন। এমনকি এমপি ও নেতাদের বাড়িতে খোঁজ নিয়েও পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে এমপি ও দলীয় নেতাদের বাড়িতে। এ হামলা ও অগ্নিসংযোগ থেকে বাদ যায়নি ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও।
আত্মগোপনে চলে যাওয়া সাবেক এমপিরা হলেন- সিরাজগঞ্জ-১ (কাজীপুর-সদরের একাংশ) প্রয়াত সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ছেলে তানভীর শাকিল জয়, সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) ড. জান্নাত আরা হেনরী, সাবেক এমপি ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না, সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ) ডা. আব্দুল আজিজ, সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) শফিকুল ইসলাম শফি, সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আব্দুল মমিন মণ্ডল ও সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের চয়ন ইসলামসহ বিভিন্ন পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানরা রয়েছেন। এ ছাড়াও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ আত্মগোপনে রয়েছেন।
রোববার জেলার ৬ সংসদ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। চলমান এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৬ জন নেতাকর্মীকে হত্যা, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটছে।
এ ছাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরাও প্রাণভয়ে বাড়ি ছেড়ে গাঢাকা দিয়েছেন।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত ৪ আগস্ট সিরাজগঞ্জ শহরে শিক্ষার্থীদের ওপর আওয়ামী লীগের হামলা ও গুলিবর্ষণের পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পুরো জেলা। এতে শহর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রঞ্জু খান (৩৮), পৌর শহরের গয়লা মহল্লার আসু মুন্সীর ছেলে যুবদলের সদস্য আব্দুল লতিফ (২৫) ও একই মহল্লার গঞ্জের আলীর ছেলে ছাত্রদলের সদস্য সুমন শেখ (১৮) নিহত হয়। এতে বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা ড. জান্নাত আরা হেনরীর বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। একই সঙ্গে সাবেক এমপি হাবিবে মিল্লাত মুন্নার বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিযোগ করে। পরে এদিন রাতে জান্নাত আরা হেনরীর বাড়ি থেকে ছাত্রলীগ কর্মী শাহীন শেখ (১৮) গজারিয়া গ্রামের অটোরিকশাচালক জাহাঙ্গীর আলমের (৪৬) কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়।
একইদিনে জেলার রায়গঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাংবাদিকসহ ৬ জন এবং এনায়েতপুর থানায় ১৩ জন পুলিশ নিহত হয়। পরদিন আরও দুই পুলিশ সদস্য চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় মারা যান। এতে চলমান আন্দোলনে সিরাজগঞ্জে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। একইসঙ্গে জেলার থানা, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয়রা বলেন, আওয়ামী লীগের কিছু এমপি ও নেতারা সাধারণ মানুষদের কোনো সময় মানুষ মনে করেন নাই। তাদের ব্যবহারে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ। তারা ১৫ বছর অতিবাহিত করে টাকার পাহাড় বানিয়ে এখন আত্মগোপনে গেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী জানান, এমপি বা জেলার শীর্ষ নেতারা কে কোথায় আছেন কেউ জানে না। কারও সঙ্গে যোগাযোগও নেই। এমপিরা ও জেলার নেতারাই নন, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারাও ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। তবে দেশের পরিস্থিতি ভালো হলে কেন্দ্রীয় নির্দেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম সচল রাখবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
Leave a Reply