নিজস্ব প্রতিনিধিঃ: মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিতর্কিত কন্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমের তথাকথিত ছেলে পরিচয় দানকারী মোঃ মিজানুর রহমান। তিনি সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়ন ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও ধল্লা গান্ধারদিয়া গ্রামের মৃত গাদুর ছেলে। বড় বোন সালেহা জাহান জেলা যুব মহিলা লীগের সদস্য সচিব ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে পরাজিত নৌকার প্রার্থী মমতাজ বেগমের উকিল মেয়ে । বোন এবং মমতাজের আশীর্বাদে মিজান মেম্বার ধল্লা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের কমিটির দপ্তর সম্পাদক পদ বাগিয়ে নেয়।
মিজান মেম্বার ও তার বোন সালেহা জাহানের বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধল্লা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংকে মমতাজের ধস নামে। অপর দিকে মিজানের বড় বোন সালেহার মুক্তিযোদ্ধা বানানোর নাম করে টাকা আত্মসাৎ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে কোনঠাসায় পড়েন মমতাজ বেগম।
এদিকে মিজান মেম্বারের গাঁয়ে আওয়ামী লীগের তকমা থাকা সত্ত্বেও গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ছলম পাল্টাতে গিয়ে বিএনপি’র কর্মী সমর্থকদের হাতে বাস্তা বাসস্টান্ডে মারপিটের শিকার হয়। তারপরেও বিএনপির একটা গ্রুপের সাথে মিশে ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দমন-পীড়নে মাঠে নেমে এসেছে সে। আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পরের দিন রাতে মিজান মেম্বারের নেতৃত্বে দুষ্কৃতিকারীরা ধল্লা বাজার অবস্থিত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খানের মালিকানাধীন পল্লী উন্নয়ন সংস্থা অফিসে লুটপাটসহ অগ্নি সংযোগ করে। পরের দিন সন্ধ্যায় উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও ধল্লা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলামের ব্যক্তিগত অফিসে হামলা করে ভাঙচুরসহ ব্যাপক লুটপাট চালায় মিজান মেম্বার ও তার লোকজন। এখানেই শেষ নয়, বিএনপি’র কর্মী সমর্থকদের শেল্টার নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। ফলে সেবা প্রার্থীরা পরিষদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। উত্তপ্ত পরিবেশের কারণে ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম ভুইয়া অফিস করতে পারছেন না বলেও অভিযোগ উঠেছে । এ নিয়ে স্থানীয় সাপ্তাহিক সময়ের সাথে পত্রিকা গত ১৯ আগষ্ট ১৩ সংখ্যা ” সিংগাইরে নিরাপত্তাহীনতায় জনপ্রতিনিধিরা শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদের জের ধরে মিজান মেম্বার পত্রিকার কপি ছুড়ে ফেলে দিয়ে ৫০০-১০০০ টাকা সাংবাদিক বলে পত্রিকার সম্পাদকে অশ্লীল ভাষা গালিগালাজ করে। এ নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
আওয়ামীলীগের শাসনামলে মিজান মেম্বারের বড় বোন সালেহা জাহান বায়রা এলাকার এক সংখ্যালঘু পরিবার কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর কথা বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে টাকা লেনদেনের কথোপকথন নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়। এ নিয়ে দৈনিক ভোরের কাগজসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিক গুলোতে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদের জের ধরে মিজান মেম্বার ভোরের কাগজ পত্রিকার স্থানীয় সাংবাদিক মাসুম বাদশাহকে হুমকি দেয়। ভুক্তভোগী সাংবাদিক থানায় জিডি করলে পুলিশ তদন্ত করে আদালতে ও প্রসিকিউশন রিপোর্ট দাখিল করেন। সেই সাথে অভিযুক্ত মিজান মেম্বারকে ব্যাখা তলব করে উপজেলা প্রশাসন । পরে উপজেলা প্রশাসন তার বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রকাশ। প্রতিবেদনের আলোকে দ্রুত ব্যবস্থা হবে বলে নাম প্রকাশ করার না শর্তে ওই মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এদিকে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার সাথে সাথে খোলস পাল্টায় মিজান মেম্বার। তার ডিগবাজির বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়া আলোচনার ঝড় উঠে। ধল্লা ইউনিয়নের বাস্তা গ্রামের বাসিন্দা মো: রমজান আলী তার ফেসবুক আইডি “Ramjan Ali” থেকে লেখেন – ” একটা রানিং আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রঙ মাখিয়ে সেজে কিভাবে বিএনপি করতে আসে সেটা আমার বোধগম্য নয়। সে আবার সাবেক এমপির পালক ছেলে রানিং মেম্বার। বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কি করে বিএনপি’র লোকজন তাকে মাথায় করে নাচে। যারা বিএনপি করেন এসব আওয়ামী লীগের দালাল থেকে সাবধান থাকবেন। এই নাকি খুব শক্তিশালী আওয়ামী-বিএনপি। ”
রমজান আলীর এমন স্ট্যাটাস নেট দুনিয়া সমালোচনার ঝড় উঠে। মিজান অনুসারীরা ইতিবাচক মন্তব্য করলেও কিন্তু বিএনপি’র নেতাকর্মীরা নেতিবাচক মন্তব্য লেখেন। কেউ কেউ লেখেন -মিজান মেম্বার আওয়ামী লীগের দালাল, সে আওয়ামীলীগ খাইছে এখন সুযোগ বুঝে বিএনপিতে ঢুকে বিএনপিকেও খাওয়ার চেষ্টা করছে। তৃণমূল নেতা কর্মীরা এ পল্টিবাজ থেকে সকলকে দূরে থাকার আহ্বান জানান।
এদিকে, একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, মিজান মেম্বার বিএনপিতে ঢুকে তার ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে। ধল্লা ইউনিয়নে বিএনপি ও আওয়ামীলীগের মধ্যে কোনো প্রকার সংঘর্ষ কিংবা অপ্রীতিকর না ঘটলেও মিজান মেম্বার দুই গ্রুপকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে মিজান ধল্লা বাজারে মিনারা নামের এক নারীকে মারপিট করে শ্লীলতাহানির হানির চেষ্টা করে। ভুক্তভোগী ওই নারী থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ ঘটনা সত্যতা যাচাইয়ে ওই এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেন। পরে সাবেক এমপি মমতাজ বেগমের ছেলে পরিচয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে।
অভিযুক্ত মো: মিজানুর রহমান মেম্বার বলেন, আপনারা যা শুনেছেন সবই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কিছু মানুষ আমার পেছনে লাগায় আমি সবকিছুই বাদ দিয়েছি।
এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আবিদুর রহমান খান রোমান বলেন, আমরা জানি আওয়ামীলীগের কিছু সুযোগ সন্ধানী বিএনপির সাথে মিশে অকারেন্স করার চেষ্টা করছে। দলের সবাইকে সতর্ক করে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তার পরেও যদি দলের কেউ শেল্টার দেয় তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply