সংবাদ সারাদেশ টোয়েন্টিফোর.কম ডেস্কঃ
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার প্রথম করোনা শনাক্ত রোগী পুলিশ সদস্য মো. মহিদ্দীন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তাৎক্ষণিক সহযোগিতার মাধ্যমে হাসপাতালে ভর্তির পাশাপাশি মানসিক সার্পোট তার মনোবল বাড়িয়েছে। হাসপাতালে চোখের সামনে অন্য করোনা আক্রান্ত রোগীর লাশের মিছিল দেখেও দৃঢ় মনোবল আর সবার ভালবাসাই বিশ দিন হাসপাতালে থাকার পর তিন দফা আবার নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল নিশ্চিত হবার পর এখন নিজ বাড়ি অবস্থান করছেন এ পুলিশ সদস্য। ওই সময় করোনার পাশাপাশি আসল যুদ্ধটা করতে হয়েছে পারিপার্শ্বিক অবস্থার বিরুদ্ধে।
কালের কণ্ঠের এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্য মহিদ্দীনের সাথে। তিনি জানান, শরীরে ঠান্ডা-জ্বর, কাশির উপসর্গ দেখা দিলে গত মাসের ৬ তারিখে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে কর্মস্থল গোপালগঞ্জ থেকে নিজের গ্রামের বাড়ি আসেন। দুই দিনে শাররিক অবস্থার উন্নতি না হলে নিজেই ৮ তারিখে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাধ্যমে শরীরের নমুনা ঢাকায় পাঠান। তার দুই দিন পর রির্পোট আসে পজেটিভ। ওই দিন রাতেই মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের আইসোলসনে রাখা হয়। পরে ঢাকার কুর্মিটলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের কাটানো বিশ দিনের অভিজ্ঞতা বলতে বলতে মহীদ্দিন থমকে যান। তিনি বলেন, আমাকে যে বেডে রাখা হয়েছিল, তার চারপাশে অস্থায়ী মানুষ সমান বেড়া দেওয়া ছিল। সব সময় আশেপাশের থেকে অন্য করোনা আক্রন্ত রোগীদের আত্ম চিৎকার শুনা যেত। পাশে থেকে বুঝা যেত তারা প্রায় সময়ই ক্ষিপ্ত আচারণ করত। প্রতিদিনই কোন না কোন আক্রন্ত ব্যক্তি মারা যেত। তাদের লাশ চোখের সামনে দিয়ে নিয়ে যেত। বাঁচা- মরার প্রশ্নে ভাবতে থাকতাম। চোখের সামনে স্ত্রী-পুত্রের স্মৃতি ভেসে উঠত। তারপরেও মনোবল হারায়নি।
করোনার কারণে কি কি সমস্যা দেখা দিত ওই সময় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার শরীর প্রচন্ড দুর্বল ছিল। কয়েক দিন কিছুই খেতে পারতাম না। দিনে দুইবার ডাক্তার এসে দেখে যেত। পরে ধীরে ধীরে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। পরবর্তীতে তিন বার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তিন বারই রির্পোট নেগেটিভ আসে। গত ৩০ এপ্রিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। বর্তমানে সুস্থ আছেন বলে তিনি জানান। শুরু থেকে শেষ পর্য়ন্ত চিকিৎসাধীন পর্যন্ত কোন টাকা খরচ হয়নি।
সুস্থতার সময় সার্বক্ষণিক খবর রাখার জন্য স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ, পুলিশ বিভাগ, প্রশাসনের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। পাশাপাশি সবাইকে করোনায় আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হবার পরার্মশ দেন। আর গরম পানি ও ভিটিামিন ‘সি’ জাতীয় খাবার গ্রহনের কথা বলেন। কিভাবে কোথা থেকে তার শরীরে করোনা এলো এখনো স্পষ্ট করে বলতে পারেন না তিনি।
তার ছেলে আলামিন হোসেন রাকিব জানান, বাবা সুস্থ হয়ে ফিরেছে এ জন্য আল্লাহ কাছে হাজারো শুকরিয়া জানাই। আমার বাবা দেশের কাজ করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। পরিবার ও সবার ভালবাসায় তিনি আমাদেও মাঝে ফিরে এসছেন। আর কেউ এ রোগে আক্রান্ত হলে এলাকাবাসী তাদেও অবহেলা না করে তাদের প্রতি ভালবাসা দেখান। দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।
শিবালয উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাউল হক জানান, ওই পুলিশ সদস্যের নমুনা আমরা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠাই। রির্পোট পজিটিভ আসার সাথে সাথে আমরা নিজ উদ্যোগে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার সকল ব্যবস্থা করে দেই। পাশাপাশি তার পরিবারের সদস্য ও তার সংর্স্পশে আসা সকলে নমুনা পরীক্ষা করি। আর ফোনে সার্বক্ষণিক তার খোঁজ খবর রাখি।
শিবালয উপজেলা নির্বাহী অফিসার এএফএম ফিরোজ মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ওই ব্যক্তির শরীরে করোনা শনাক্ত হবার পরই তার বাড়ির সহ আশে-পাশের কয়েকটি গ্রাম লকডাউন করা হয়। ওই সময় তার পরিবারের মাঝে নিয়মিত খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়। আর তাৎক্ষণিক তাকে স্বাস্থ্য বিভাগের সহায়তায় ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।
শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, পুলিশ সদস্য মহিদ্দীনের নমুনা পরীক্ষা থেকে শুরু করে হাসপাতালে চিকিৎসা পর্য়ন্ত সার্বক্ষণিক শিবালয় থানা পুলিশ সাথে ছিল।
Leave a Reply