সংবাদ সারাদেশ টোয়েন্টিফোর,কম ডেস্কঃ
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস ও নানা সমস্যার কারণে পথে বসতে শুরু করেছেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ডেইরী খামারিরা। এতে করে ব্যাপক লোকশানে পড়েছেন অনেক খামারি।
এদের মধ্যে উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়নের বাসিন্দা খামারি মো. আলম মিয়া জানান তার খামারে ৬৫ টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে প্রতিদিন খামার থেকে প্রায় ৩০০ লিটার দুধ হয়। পূর্বের মাস গুলোতে প্রতিদিন ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকার দুধ বিক্রি হতো।
কিন্তু এই মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে এখন দুধ বিক্রি হচ্ছে না। যাও বিক্রি হচ্ছে দাম পাচ্ছি প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। অথচ প্রতিদিন খামারে খরচ হচ্ছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। এ অবস্থার মধ্যে নালি, কুড়া, ভূসি (গো খাদ্য) দাম বেড়েই চলছে।
অপরদিকে ডেইরী খামারের শ্রমিকরাও তাদের বাড়ি চলে গিয়েছে। এমতাবস্থায় খামারে গুরুর পরিচর্চার কমতি পড়েছে সীমাহীনভাবে। আগের তুলনায় যেহারে গুরু মোটা ছিলো এখন বর্তমানে গরুগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে, রোগব্যাধি হওয়ার সম্ভবনা বেশি দেখা দিচ্ছে। তাতে এখন এমন অবস্থা দাঁড়িয়ে গরুগুলো বিক্রি করতে পারলে প্রাণে বাঁচি। গুরুর কথা বলতে বলতে স্কুলপড়ুয়া ছেলের লেখাপড়া নিয়ে বেশ চিন্তিত।
একই ইউনিয়নের আরেক ডেইরী খামারি মো. আনোয়ার বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ডেইরী খামারের সাথে জড়িত। কখনো লোকশানের মুখ দেখেনি। এখন প্রতিদিন গাভীদের থেকে প্রায় ১৫০-১৯০ লিটার দুধ মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিচ্ছি। হাট বাজার বন্ধ দুধ কেনার মানুষ নেই। অপরদিকে হঠাৎ কয়েকধরে তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে অসুস্থ হয়ে আমার ৪টি গরু মারা গেছে যার বাজারমূল্য প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় ডাক্তার আসে না। এছাড়াও প্রতিদিন খামারে প্রায় ৫-৭ হাজার টাকা লোকশান হচ্ছে। হঠাৎ করে দাম বেড়ে গিয়েছে খাদ্য শয্যের দাম।
এছাড়াও বেশ কয়েকজন ডেইরী খামারির সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনা ভাইরাসের কারণে নিজেদের জীবন বেঁচে থাকা ও গরুর প্রাণ বাঁচাতে আতঙ্কে রয়েছি।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, সারা উপজেলায় তালিকাভুক্ত প্রায় ৫৩ জন ডেইরী খামারি আছেন। সেখান থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার লিটার দুধ উৎপাদিত হচ্ছে। এই গাভীর দুধ উপজেলার বিভিন্ন বাজার, হোটেল ও দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত করণ কারখানায় বিক্রি করতো তারা। কিন্তু করোনার কারণে হোটেলগুলো বন্ধ থাকায় আহরিত এই দুধ পুড়োটাই এখন অবিক্রিত বা বিক্রি হলেও লিটার প্রতি ঘাটতি রয়েছে ২৫-৩০ টাকা। সেই হিসেবে প্রতিদিন খামারিদের নগদ আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় লাখ টাকা। তবে এই ক্ষতি দীর্ঘায়িত হতে থাকলে আশংকা রয়েছে খুব দ্রুতই গভীর সংকটের মধ্যে পড়বে কোটি কোটি বিনিয়োজিত এই শিল্প।
ডেইরী খামারি আলম মিয়া, আনোয়ারসহ অন্যান্য খামারিদের দাবি মির্জাপুরে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগের এই ডেইরী শিল্প বাঁচাতে সরকার যদি পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ না নেয় তবে খামারিদের পথে বসা ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকবে না।
শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাইফুদ্দিন উদ্দিন সুজন বলেন, মির্জাপুরের ডেইরী খামারিদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। সারা উপজেলার অধিকাংশ গরুর খামারির সাথে তাদের যোগাযোগ হচ্ছে। তাদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। বাকিটা সরকারি সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে। তবে আশা করছি সরকার এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আমারসংবাদ/কেএস
Leave a Reply