গত ২২ অক্টোবর দৈনিক সমকাল পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে ‘ সাব রেজিস্ট্রার লুৎফর নিজে বেতন পান ৭০ হজার চালক ৪০, চড়েন ৩ গাড়িতে ঢাকায় থাকেন ২ কোটি টাকার ফ্ল্যাটে ’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন উত্তরা সাব রেজিস্ট্রার মো. লুৎফর রহমান মোল্লা।
প্রতিবাদলিপিতে তিনি দাবি করেন, প্রকাশিত সংবাদে তাকে জড়িয়ে যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
কৃষি জমির কথা বলা হয়েছে সেগুলো আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি। সামান্য কিছু জমি কেনা হয়েছে তা আমাদের বৈধ আয় এবং সাধারণ ভবিষৎ তহবিলের অর্থ হতে গৃহীত ঋণের মাধ্যমে।
এছাড়া বন্ধকী সূত্রে আমরা কোনো জমি ভোগ দখল করি না। আমরা পাঁচ ভাই বোনের (৪ ভাই ও ১ বোন) সবাই চাকরিজীবী এবং এক ভাইয়ের স্ত্রী সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক (শওকত আলীর স্ত্রী)। বাবার মৃত্যুর পরেও আমরা পৃথক হইনি। সবাই মিলে পৈতিক ভিটায় একটি বাড়ি তৈরি করেছি যার অর্ধেক একতলা ও অর্ধেক দোতলা। বাড়িটির নির্মাণ কাজ এখনও শেষ হয়নি। ২০১১ সালে একতলা অংশ এবং ২০২০ সাল থেকে দোতলা অংশের কাজ শুরু করে এখনও শেষ করা সম্ভব হয়নি।
তারা উল্লেখ করেন, অন্যের জমি দখলের যে অভিযোগ করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। ১৯৭৫ সালে আমাদের বাবা মমতাজ উদ্দিন মন্ডল ও আমাদের ফুফাতো ভগ্নিপতি মো. সোহরাব হোসেন মাস্টার যৌথভাবে বিলসা মৌজার ৬ বিঘা ৫ কাঠা কৃষি জমি ক্রয় করেন (আমাদের বাবার নামে ৫ বিঘা ও ভিগ্নিপতির নামে ১ বিঘা ৫ কাঠা)। কিন্তু অভিযোগকারী জনাব ভোলা গং প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে ওই জমি ভোগ দখল করতে থাকেন। বাধ্য হয়ে আমাদের পিতা ১৯৭৬ সালে আদালতে মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ ৩৪ বছর মামলা চলার পর ২০১০ সালে সহকারী জজের আদালত আমাদের বাবার পক্ষে রায় দেন। এরপর ভোলা গং নাটোর জেলা জজ আদালতে আপিল করে হেরে যান। তারা পরবর্তীতে হাইকোর্টে আপিল করেও হেরে যান। মামলার রায় পেয়ে আমরা অদ্যাবধি ওই জমি ভোগ দখল করছি। কাজেই আমাদের বিরুদ্ধে জোর করে তাদের জমি দখলের যে অভিযোগটি আনা হয়েছে তা সত্য নয়। মামলার রায়ের কাজগপত্র আমাদের সংরক্ষণে আছে।
হায়দার আলী তার ১ একর জমি জোরপূর্বক দখলের যে অভিযোগ করেছেন তা ভিত্তিহীন। হায়দার মাস্টারের বাপ-চাচারা মোট ৭ ভাই। এই সাত ভাই এস.এ রেকর্ড অনুযায়ী এই ১ একর (প্রকৃত ৯৪ শতাংশ) জমির মালিক। কিন্তু তিনি একমাত্র শিক্ষিত হওয়ায় সবার পক্ষে কাগজ পত্র নিজেই দেখতেন। সেই সুযোগে আর.এস রেকর্ডের সময় অন্য ৬ চাচাকে বাদ দিয়ে সমস্ত জমি শুধু তার বাবা উজির মন্ডলের নামে রেকর্ড করান। তারপরও এযাবৎ উজির মন্ডলের অন্য ভাই বা ভাইদের ওয়ারিশগণ সেই জমি ভোগ দখল করছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিয়ে রেকর্ডের অজুহাতে হায়দার মাস্টার, তার ভাতিজা অভিযোগকারী আমিরুল ও শহীদুলসহ ২৫-৩০ জন আত্মীয় স্বজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সেই জমি দখল করতে যায়। অপর পক্ষে জমির অন্য ওয়ারিশরা জমির দখল ঠিক রাখার জন্য অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সেখানে যায়। এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের উপক্রম হয়। আমরা থানা এবং উপজেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর অফিসাকে অনুরোধ করি বিষয়টি দেখার জন্য। এ কারণে হায়দার মাস্টার জমি দখলে ব্যর্থ হয়ে আমাদের দুই ভাইয়ের উপর সংক্ষুদ্ধ হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে এই মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
প্রকৃত পক্ষে হায়দার আলী একজন অর্থলোভী, ধূর্ত ও অন্যের হক নষ্টকারী এক ব্যক্তি। যে করেই হোক না কেন অর্থসম্পদ পেলেই তিনি খুশি। তার ছেলে মো. মাহবুবুল আলম, অফিসার্স ইনচার্জ (তদন্ত) হিসেবে নওগাঁ জেলার সদর তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত আছেন। হায়দারের ভাতিজা মো. আল আমিন কাস্টমস ইন্সপেক্টর হিসেবে বাগেরহাটে কর্মরত আছেন। হায়দার মাস্টারের পরামর্শে আল আমিন সরকারি কলেজের প্রভাষকের চাকরি বাদ দিয়ে ২য় শ্রেণির কাস্টমস ইন্সপেক্টর পদে যোগদান করেন। হায়দার মাস্টারের ৬০-৭০ বিঘা জমি আছে এবং তিনি সরকারি রাস্তার উপর দোতালা বিল্ডিং নির্মান করে বসবাস করছেন।
গ্রামের সড়কটি পাকা করণের সময় জনৈক নাজমুল হাসানের পৈত্রিক সম্পত্তির উপর দিয়ে তা নির্মাণের অভিযোগটি ভিত্তিহীন। সড়কটি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত বিস্তৃত। রাস্তাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাস্তাটি স্থানীয় সরকার বিভাগের। স্থানীয় সরকার বিভাগ পূর্বের বিদ্যমান কাঁচা রাস্তাটি পাকা করেছে। সরকারি কাজে কেউ বাধা প্রদান করায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সমস্ত দায়-দায়িত্ব সেই কর্তপক্ষের। তাই জনৈক নাজমুল হাসানকে কে বা কারা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে তা আমাদের অজানা। অতএব আমাদের বিরুদ্ধে তার এই অভিযোগটি ভিত্তিহীন।
তারা বলেন, আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। আমরা কোনোভাবেই ব্যক্তিগতভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই এবং রাজনীতিতে জড়িত হওয়ার সুযোগও ছিল না। কাজেই আমাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগ সত্য নয়। মোট কথা, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে হায়দার আলী তার দখলে থাকা আমাদের বাড়ির তিন শতাংশ জায়গার দখল না ছাড়ার কৌশল হিসেবে সংবাদ সম্মেলন করে কাল্পনিক তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছেন। কাজেই আমাদের দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে তার সবই মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট, ষড়যন্ত্রমূলক, হয়রানীমূলক এবং সম্মানহানিকর। এসব সংবাদ প্রকাশ করে আমাদের সামাজিক মর্যাদা ক্ষন্ন করা হয়েছে। আমরা এ ধরনের কাল্পনিক সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
প্রতিবেদকের বক্তব্য
গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর ইউনিয়নের অন্তত ১০ জন কৃষক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। লিখিত ওই অভিযোগ ও ক্যামেরার সামনে দেওয়া ভুক্তভোগী কৃষকদের বক্তব্যের ভিত্তিতে সংবাদটি প্রকাশ করা হয়। এখানে প্রতিবেদকের নিজস্ব কোনও বক্তব্য নেই।
Leave a Reply