সংবাদ সারাদেশ টোয়েন্টিফোর.কম ডেস্কঃ
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ময়মনসিংহের এস.কে হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে মারা গেছেন ৪০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। ওই ব্যক্তির বাড়ি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার চরভবসুর ঠোটাপাড়ার গ্রামে। মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে আইইডিসিআরের নির্দেশনা অনুযায়ী সম্পন্ন হয়েছে তার জানাজা ও দাফন। করোনা সংক্রমণের ভয় ও প্রশাসনের কড়াকড়িতে মৃতের দাফনকার্যে অংশ নেয়নি পরিবারের কেউ। শেষদেখা দূরে থাক, আত্মীয়-স্বজনও আসেনি কাছে। জানাজাতেও অংশ নিতে পারেনি বাবা-চাচা-ভাইয়েরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দাফন কমিটির ইমাম দেওয়ানগঞ্জ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের(ইফা) মডেল কেয়ারটেকার হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ সোলায়মানসহ পাঁচজন নিয়েই করেন ওই মৃত ব্যক্তির জানাজা। জানাজায় ছিলেন দেওয়ানগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসাদুজ্জামান, ইফার ফিল্ড সুপারভাইজার আব্দুস সোবহানসহ দাফন কমিটির ৩ সদস্য। জানাজা শেষে সম্পূর্ণ সুরক্ষা পোশাকে আবৃত হয়ে খাটিয়া দিয়ে স্থানীয় গোরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয় লাশ। কবরেও নামানো হয় বিশেষ প্রক্রিয়ার নিয়ম অনুসরণ করেই
এর আগে মৃত্যের পরিবারের ইচ্ছে অনুযায়ী তার লাশ গোসল করানো হয়েছে। গোসলের সমস্ত ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া। সম্পূর্ণ সুরক্ষা পোশাকে আবৃত হয়ে লাশের গোসল করিয়েছে দাফন কমিটির সদস্যরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই ব্যক্তির মৃত্যুর খবর রাতেই জানানো হয়েছিল তার স্বজনদের। তার পরিবারের লোকজন গ্রামের বাড়িতেই লাশ দাফন করার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে অনুরোধ করেছিল। কিন্তু লাশ পরিবহনের জন্য রাজি হয়নি ময়মনসিংহের কোনো অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার। অবশেষে সব ভয়কে উপেক্ষা করে এগিয়ে আসেন জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার আব্দুর রহিম।
ময়মনসিংহ এস.কে হাসপাতাল থেকে তার এ্যাম্বুলেন্সে করেই বহন করে নিয়ে এসেছিলেন ওই ব্যক্তির লাশ। মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৬ টায় পরিবহন সুরক্ষার আনুষ্ঠানিকতা শেষে লাশ নিয়ে ময়মনসিংহ থেকে জামালপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন ওই ড্রাইভার। সাড়ে নয়টার দিকে পৌঁছেন দেওয়ানগঞ্জে। উপজেলা প্রশাসনের নজরদারিতে স্থানীয় স্বপন গোরস্থানের পাশে রাখা হয় লাশ। আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল দেওয়ানগঞ্জ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) ৮ সদস্যের দাফন কমিটির ৪ সদস্য।
এদিকে ময়মনসিংহ হাসপাতালের কক্ষে কোয়ারেন্টিনে থাকা ওই মৃত ব্যক্তির স্ত্রী ও তার পরিবারের অন্যান্য লোকজনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে জানা গেছে, ওই মৃত ব্যক্তির সংসারে স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। গত রোববার (১৯ এপ্রিল) সকালে আইসোলেশনে থাকা স্বামীর সাথে দেখা করার সুযোগ করে দিয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বেশি সময় নয়, মাত্র ২০ মিনিটের দেখায় করোনা আক্রান্ত ওই ব্যক্তি দু’একটি কথা বলেছিল স্ত্রীর সাথে।
আরো জানা গেছে, ওই ব্যক্তি রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় একটি বায়িং হাউজের কর্মী ছিলেন। তার দেহে করোনার উপসর্গ জ্বর, সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা দিল। সেই সাথে শ্বাসকষ্টও ছিল। জন্ডিসেও আক্রান্ত হন তিনি। এ অবস্থা নিয়েই গত ১০ এপ্রিল তিনি ঢাকা থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার ঠোটাপাড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে চলে আসেন। খবর পেয়ে গত মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) তার নমুনা সংগ্রহ করে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
গত বুধবার (১৫ এপ্রিল) নমুনা পরীক্ষা শেষে তার দেহে করোনাভাইরাস পজেটিভ পাওয়া যায়। রোগীর অবস্থার অবনতি দেখে তাকে জামালপুর সদর হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে না নিয়ে ওই রাতেই একই অ্যাম্বুলেন্সযোগেই ময়মনসিংহের এস.কে হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে স্থানাস্তর করা হয়।
এদিকে জামালপুরের সিভিল সার্জন ডাক্তার আবু সাঈদ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সোমবার (২০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১১ টার দিকে ময়মনসিংহ এস.কে হাসপাতালে মারা যান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেওয়ানগঞ্জের ওই রোগী। তার মৃত্যুর বিষয়টি স্ত্রীসহ দেওয়ানগঞ্জে তার নিকট আত্মীয়দের জানানো হয়। এরপর প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় অ্যাম্বুলেন্স লাশ দেওয়ানগঞ্জে তার নিজ বাড়িতে নেয়া হয়। করোনা সংক্রমণরোধে সকল নিয়ম অনুসরণ করে তার লাশ দাফন করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দাফন কমিটির সদস্যরা।’
এ ব্যাপারে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলাবাসীর সার্বিক সুরক্ষার কথা ভেবেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ওই ব্যক্তির জানাজা ও দাফনে ইফা ও প্রশাসনের লোক ছাড়া তার পরিবার ও স্বজনদের কাউকে অংশ নিতে দেয়া হয়নি। আইইডিসিআর ও ইসলামিক শরীয়ার সকল নিয়ম অনুসরণ করেই তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
Leave a Reply