সংবাদ সারাদেশ টোয়েন্টিফোর.কম ডেস্কঃ
ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার যন্ত্রাইল ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর আলম নামে এক ওএমএস ডিলারের বিরুদ্ধে চাল নিয়ে চালবাজির অভিযোগ উঠেছে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকার নাম থাকার পরও ইউনিয়নের পাঁচটি ওয়ার্ডের প্রায় শতাধিক পরিবারকে কার্ড আর চাল না দেওয়ার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে গত ২৬ এপ্রিল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগি শতাধিক পরিবার।
সরেজমিনে গিয়ে যন্ত্রাইল ইউনিয়নের ৪, ৫, ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। তালিকায় নাম থাকার পরও হতদরিদ্রদের চাল না দিয়ে চাল আত্মসাতের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নন্দলাল সিং-এর কাছে অভিযোগ দিলেও কোনো সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগি পরিবারগুলোর।
চরখলসী গ্রামের জনাব আলী (তালিকা নং ৩৯২) অভিযোগ করে বলেন, আমি ২ সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ছোট এই ভাঙা ঘরে থাহি। ১০ টাকা করে চাইল (চাল) পামু শুনে মেম্বারের কাছে আইডি কার্ড দিছিলাম। পরে মেম্বার ও ডিলারের কাছ হুনছি (শুনেছি) আমার কার্ড হয় নাই। এখন দেহি তালিকায় আমার নাম আছে। কিন্তু আমি তো কার্ডই পাইলাম না, চাইল পামু কেমনে।
একই এলাকার ফরিদা পারভিন (তালিকা নং ৩৯৬) বলেন, আমি ১শ টাকা খরচ করে চালের জন্য ডিলারের কাছে গেছিলাম। ডিলার কইছে কার্ড হয় নাই। তখন নন্দা চেয়ারম্যানও ছিল। তার কাছে অভিযোগ করলাম, তিনি দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলেন। এখন দেখি আমার নাম তালিকায়। অথচ আমি চাল বা কার্ড কিছুই পাইনি।
ডিলারের পাশাপাশি চেয়ারম্যানের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ একই এলাকার সুজন মিয়ার (তালিকা নং ৪৩৮) মা লক্ষি বেগম। তিনি বলেন, তালিকায় আমার ছেলের নাম থাকার পরও ডিলার ও চেয়ারম্যান জানিয়েছেন তালিকায় নাম নেই। চেয়ারম্যানকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উল্টো খারাপ ব্যবহার করেছেন।
একই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দা রিনা (তালিকা নং ৩৮৭), রফিক (৩৯০), লিপি বেগম (৩৯১), রামশীল (৪২২), প্রদীপ শীল (৪২৬), দাহের মৃর্ধার (৪৩৭)। তারা জানান, তালিকায় নাম থাকার পরও তারা চাল পাননি। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগিরা স্থানীয় মেম্বার স্বপন কুমার সরকারকে জানালেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি।
এছাড়া তালিকায় নাম থাকার পরও চাল না পাওয়া লিখিত অভিযোগ করেছেন ৭নং ওয়ার্ডের করুনা রানী হালদার (তালিকা নং ৪৭৯), সবিতা রানী হালদার (২১৭), লক্ষিরানী রাজবংশী (৪৫৬), মোহনবাসী হালদার (৪৬০), রামচরণ হালদার (৪৬৯), ৯নং ওয়ার্ডের রেখারানী বেপারী (৫৭), আনোয়ারা বেগম (৬০), হাজেরা বিবি (১০৭), ৫ নং ওয়ার্ডের অবলা রানী মণ্ডল (১৩৫), চঞ্চল গোলজার (১৩৯), মিতালী রানী কাপাসিয়া (১৪৩), কলি আক্তারসহ (১৪৫) অনেকে।
এদিকে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানের খবর পেয়ে অভিযোগকারী পরিবারগুলোকে কার্ড ও চাল পৌঁছে দিচ্ছেন অভিযুক্ত ডিলার ও তার লোকজন। একই সাথে তাদেরকে অভিযোগ প্রত্যাহার ও মিথ্যা স্বাক্ষী দেওয়ার প্ররোচনা দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ নতুন করে চাল ও কার্ড পাওয়া কয়েকটি পরিবারের।
যন্ত্রাইল ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য স্বপন কুমার সরকার বলেন, যখন আমি দেখলাম তালিকায় নাম আছে কিন্তু অনেকে চাল পাচ্ছে না, সাথে সাথে চেয়ারম্যান, ডিলার এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। এখন শুনছি ওরা অভিযোগ দেওয়ার পর কয়েকজনকে চাল দিয়েছে। এখনো অনেকে চাল ও কার্ড পাইনি। এর একটি স্থায়ী সুরাহা হওয়া দরকার।
ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য দ্বীজেন বাউল বলেন, তালিকা দেখে কয়েকজনের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, তালিকায় তাদের নাম আছে কিন্তু তাদের কার্ডও দেয় নাই আবার চালও দেয় নাই। তখন ডিলার জাহাঙ্গীরকে ফোন দিয়েছিলাম। কিন্তু ডিলার কোনো উত্তর দিতে পারেনি। এ ব্যাপারে চেয়ারম্যানকে জানালেও তিনি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন বলতে পারি না। তখন যারা কার্ড ও চাল পাননি তারা ইউএনও-এর কাছে অভিযোগ দিয়েছিল। কিন্তু এখন ওরা অভিযোগকারীদের বাড়িতে গিয়ে কার্ড আর চাল দিচ্ছে।
অভিযোগ স্বীকার করে ডিলার জাহাঙ্গীর মুঠোফোনে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। যাক একটা ভুল হয়ে গেছে। যারা অভিযোগ করেছিল তাদের এখন চালও দিছি কার্ডও দিচ্ছি।
যন্ত্রাইল ইউপি চেয়ারম্যান নন্দলাল সিং মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ এম সালাউদ্দিন মনজু বলেন, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply