পৃথিবীজুড়ে এই মুহূর্তে সর্বাধিক আলোচিত যে দুটি শব্দ তা হচ্ছে ‘করোনা’ এবং ‘কোয়ারেন্টাইন’। বাচ্চা থেকে প্রবীণ সবাই এখন জানে ‘করোনা’ সম্পর্কে। বলতে গেলে ‘করোনা’ এতদিনে নিজেই বুঝিয়ে দিয়েছে যে সে কি! আর ‘কোয়ারেন্টাইন’ মানে যে রোগের সংক্রমণ এড়াতে নিজেকে সবার থেকে একটি ঘরে আলাদা করে রাখা এবং অন্যদের থেকে নির্দিষ্ট দুরত্ব বজায় রাখা, এটাও আমরা সবাই জানি। কিন্তু জানেন কি, কোথা থেকে এসেছে এই ‘কোয়ারেন্টাইন’ শব্দটি? কি এর উৎস? আসুন, জেনে নেই এ সম্পর্কে।
এই কোয়ারেন্টাইন শব্দের উৎপত্তি হয় চতুর্দশ শতকে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বিভিন্ন পথের মধ্যে অন্যতম ছিল ‘সিল্ক রুট’। এটি জলপথে বিস্তৃত ছিল এশিয়া মহাদেশ থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপের গ্রিস এবং ইতালি পর্যন্ত। ১৩৪০ সালে সম্ভবত মধ্য এশিয়া থেকে এই সিল্ক রুটের বাণিজ্যপথ ধরেই ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে এক মারণরোগ। যার নাম ‘বিউবোনিক প্লেগ’। দুরারোগ্য এই ব্যাধিটি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে লাখ লাখ মানুষের মধ্যে। ফলে রোগটিকে অভিহিত করা হয় ‘ব্ল্যাক ডেথ’ নামে। প্রতি দশকেই কখনও না কখনও ইউরোপে ফিরে আসতে থাকে এই ভয়ঙ্কর ‘ব্ল্যাক ডেথ’। এরপর আকার নিতে থাকে মহামারীর। আর এতে প্রাণ যেতে থাকে অগণিত মানুষের।
১৩৭৩ সালে যখন ইউরোপে ফের প্রাদুর্ভাব ঘটায় এই রোগ, ইতালির বন্দরনগরী ভেনিসের প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা তখন একটি কঠোর সিদ্ধান্ত নেন। সেটি হচ্ছে, বাইরে থেকে আসা কোনো জাহাজে প্লেগে আক্রান্ত কোনোও রোগী আছেন, এমন সন্দেহ হওয়ামাত্রই সেই জাহাজের ভেনিসে ঢোকার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। সংশ্লিষ্ট জাহাজকে ভেনিসে ঢোকার আগে একটি দ্বীপে ৪০ দিন অপেক্ষা করতে হবে। ইতালীয় ভাষায় ৪০কে বলা হয় ‘কোয়ারান্তেনা’। সংক্রমণ-প্রতিরোধে ৪০ দিনের এই দূরবর্তী অপেক্ষার সময়কে বলা হত ‘কোয়ারান্তিনারো’। আর এই ‘কোয়ারান্তিনারো’ থেকেই ইংরেজি শব্দ ‘কোয়ারেন্টাইন’-এর উৎপত্তি।
কিন্তু, নিয়তির কি নির্মম পরিহাস! মহামারীর সংক্রমণ এড়াতে রোগীদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে এই প্রথার উদ্ভাবনী সূচনা করেছিলো যে দেশ, আজ করোনার দাপটে সারা বিশ্বের মাঝে সবচেয়ে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় সেই ইতালি।
Leave a Reply